সচিবালয়ে আগুন : তদন্ত কমিটির অনুসন্ধান শুরু
- আপলোড সময় : ২৮-১২-২০২৪ ০৯:৪৫:১২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-১২-২০২৪ ০৯:৪৫:১২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ::
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনার কারণ উদঘাটনে অনুসন্ধান শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ঘিরে রাখা ৭ নম্বর ভবনে অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন তারা। তদন্ত কমিটির পাশপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও অনুসন্ধান করছেন।
শুক্রবার সকালে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আট সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরাও প্রবেশ করেন। শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় কমিটি তাদের সভার কাজ শুরু করে।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, সচিবালয়ে কোনও গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের ঊচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাকেও মূল প্রবেশপথের বাইরে গাড়ি রেখে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, কমিটির সব সদস্য উপস্থিত আছেন। কমিটি কর্মপন্থা নির্ধারণ সংক্রান্ত আলোচনা শেষে মন্ত্রণালয়ের আগুনে পোড়া ফ্লোরগুলো পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শন শেষে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভায় যোগ দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। এছাড়াও কী কারণে আগুন লেগেছে, তা যাচাইয়ে সিআইডি, র্যাব, পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দলও রয়েছে বলে জানা গেছে।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে তদন্ত কমিটির সদস্য ফায়ার সার্ভিসের ডিজি সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। বলার মতো এখনও কিছু হয়নি।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। ওই ভবনের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তদন্ত কাজের প্রয়োজনে ওইদিন সাংবাদিকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। একইভাবে শুক্রবার সচিবালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার সকাল থেকেই সচিবালয়ের মূল ফটকে পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তদন্ত কাজের সঙ্গে জড়িত, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও সচিবালয়ের সব ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
বৃহ¯পতিবার সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা উদঘাটন ও সবিচালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সুপারিশ করতে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য করা হয়েছে- পুলিশের মহাপরিদর্শক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর মনজুর, ঢাকা ক্যন্টনমেন্টের সিএমটিডি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব রাসেল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ের কেমিক্যাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত খান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালককে।
কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়, সংঘটিত অগ্নিকা-ের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন, অগ্নি দুর্ঘটনার পেছনে কারও ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব আছে কিনা তা উদ্ঘাটন এবং সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সুপারিশ করা এবং আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে হবে।
অন্যদিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য দুটি কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একটিতে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) মোহাম্মদ শফিউল আরিফকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন যুগ্ম সচিব (আইন ও প্রতিষ্ঠান) জাহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব (প্রশাসন ও বাজেট) আ স ম হাসান আল আমিন, যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুব্রত কুমার সিকদার, উপসচিব (প্রশাসন অধিশাখা-২) ড. অশোক কুমার বিশ্বাস, সিস্টেম এনালিস্ট প্রকৌশলী মো. মোনায়েম উদ্দিন চৌধুরী। কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে উপসচিব রহিমা আক্তারকে (প্রশাসন)।
আরেকটি কমিটিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন) আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য করা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ), স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন), স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা-২ অধিশাখা), স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন অধিশাখা), স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১)। কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিবকে (প্রশাসন অধিশাখা)।
এছাড়া আগুনের ঘটনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের স¤পদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিতে সদস্য করা হয় উপসচিব মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, সিস্টেম এনালিস্ট সুকান্ত বসাক ও সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম মেহরাব হোসেনকে। এছাড়া সদস্যসচিব করা হয়েছে উপসচিব মো. কামাল হোসেনকে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। আগুনে ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ